কলকাতার ভুতের বাড়ি (প্রথম পর্ব)

সর্ষের মধ্যে ভুত !

প্রবাদটি বহুল প্রচলিত । কিন্তু আপনি কি জানেন যে মহানগরীর কথা আপনি বড়াই করে বিশ্ববাসীর কাছে বলেন কিংবা ভবিষ্যতের লণ্ডন হিসেবে কলকাতার চালচিত্রের কথা ভাবেন, যদি সেই খাস কলকাতাতেই ভুতের দেখা পেয়ে যান, কেমন লাগবে ? ভয় পেয়ে গেলেন ? না কি ভাবছেন একবিংশ শতাব্দীতে কি গালগপ্পো জুড়েছি । কিন্তু সর্ষের মধ্যেই যে ভুত আছে ! তাহলে দেখে নেওয়া যাক কলকাতার ভুতুড়ে জায়গাগুলো –

(১) ন্যাশানাল লাইব্রেরীঃ- কথিত যে ন্যাশানাল লাইব্রেরি ভুতের আখড়া । লাইব্রেরীতে যারা না কি একা একা পড়ে, তারা অন্য কারও নিঃশ্বাস নেওয়ার শব্দ শুনতে পায় । অথবা হঠাৎ পায়ের আওয়াজ শুনতে পায় যায় রাত্তিরে । এটা নাকি ঘটিয়ে থাকেন লর্ড মেটক্যাফের স্ত্রী । যে সমস্ত লাইব্রেরীয়ান এখানে কাজ করেন, তাঁরা বলেন – তাদের চেয়ার নাকি টেনে নেওয়া হয় আচমকা, বইয়ের পাতা আপনা আপনি উলটে যায়, কিংবা বুক সেলফ থেকে বই কোনো কারণ ছাড়াই মেঝেতে পড়ে যায় ।


   এমনকি যারা রাত্তিরে গার্ড দেন তারাও নানাবিধ অলৌকিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন । আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার উদ্যোগে ২০১০ সালে ন্যাশানাল লাইব্রেরীতেই একটি ২০০ বছরের প্রাচীন কক্ষ খুঁজে পাওয়া গেছে। যেটি মাটির তলায় অবস্থিত এবং যার আয়তন প্রায় ১০০০ স্কোয়ার ফিট। যেখান থেকে পৃথিবীর আলো দেখতে পাওয়া যায়না এবং বেরোবার কোনো আলাদা পথ বা দরজাও নেই । একেবারে ইংল্যাণ্ডের দূর্গগুলির আদলে (চিলিংহ্যাম দূর্গ) ,যার ভেতরে এরকম অনেক চোরা কুঠুরি থাকত, শাস্তি দেওয়ার জন্য  হতেও পারে ! শিহরিত করে দেওয়া যে সব ইতিহাস – ভুত থাকার সম্ভবনা প্রচুর ।  

() হেস্টিংস হাউসঃ  বাংলার প্রথম গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের নাম আমরা অনেক শুনেছি তাঁর নামেই এই বাড়িটির নামকরণ, সেটাও আমরা জানি তবে আপনাকে যদি বলি, প্রত্যেক ইংরেজি নতুন বছরের শুরুতে হেস্টিংস সাহেবের ভুত এই বাড়িতে আসে আপনি বিশ্বাস করবেন ? আপনি নাই করুন, লোকে বলে প্রত্যেক নতুন বছরে সাহেব তাঁর ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে এই বাড়িতে আসেন তবে অন্য আরেকটি ঘটনার কথাও এক্ষেত্রে জানিয়ে রাখি । 

১৮৮৭ সালে হেস্টিংস সাহেবকে ব্রিটিশ সরকার বরখাস্ত করে দূর্নীতির দায়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে প্রায় সাত বছর লেগে গেছিল সাহেবের । তিনি যে নির্দোষ সেই সংক্রান্ত কাগজপত্র না কি এই বাড়িতে রয়েছে, সেগুলি নিতেই না কি তিনি ফিরে ফিরে আসেন । বর্তমানে এটি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওমেন্স কলেজ । এই বাড়িতে  নানান অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে বলে ছাত্রীদের মুখে শোনা যায় । তাদের কারও কারও দাবি, এর পেছনে হেস্টিংস সাহেব স্বয়ং ।


(৩) রাইটার্স বিল্ডিং: ৩০০ বছরেরও  বেশি পুরানো এই বাড়িটিকে আমরা বিনয় বাদল দিনেশের নামে বেশি ভাল চিনি তাঁরাই সিম্পসন সাহেবকে হত্যা করতে এসেছিল বাকিটুকু ইতিহাস তবে, এই বাড়িটি যে লেখকদের নয় সেটা আমরা সবাই কমবেশি জানি । 

যারা জানেন না তাদের বলি, রাইটার্স বিল্ডিং হল রাজ্যের প্রশাসনিক কাজকর্মের জায়গা । তবে এই অফিসে সন্ধের পর আর কেউ থাকেন না । এখনও এখানকার অনেক ঘর তালা বন্ধ অবস্থায় । শোনা যায় রাত্তিরে না কি সেখানে ডুয়েল খেলাও হয় । আশেপাশের রাস্তার হকাররা জানিয়েছে, তাঁরা রাত্তিরে এই বাড়ি থেকে কান্নার আওয়াজ শুনতে পায় । তাই সন্ধ্যা সাতটার পরে, এই বাড়িতে কোনদিন কেউ থাকেনা ।  (চলবে) 

No comments: